| | | |

bou akhon magi সুদের টাকা শোধ হলো বউ শাড়ি দিয়ে

bou akhon magi নয়নতারার মুখে বলা কথায়, সঞ্জয় সংক্ষেপে যা বুঝলো।তা হলো,মাদক ও জুয়ার জন্য টাকার ধার দেনায় জড়িত ছিল সঞ্জয়ের বড় ভাই। টাকা পরিশোধ না করতে পারায়।তাদের

বাড়ি ঘর দখল নিতে আসে তাদের পাড়াই এক প্রভাবশালী লোক রাজেন্দ্র রায়।সঞ্জয়ের বড় ভাই বাঁধা দিলে দুজনের মধ্যে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে রাজেন্দ্রের মাথা ফাঁটিয়ে দিয়েছে সঞ্জয়ের বড়দা সোহম।এখন সে থানায়।

মুরুব্বীদের আলোচনা শেষে দেখা যায়।সোহম নয়নতারার বাবার থেকে কৌশলে তাদের জমিজমার দলিল নিয়ে জুয়ার বাজিতে বন্ধক রেখেছিল। এখন তার চাকরিটা গেছে থানার মামলায়। bou akhon magi

এই মূহুর্তে নয়নতারার দাবি তার স্বামী কে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনা হোক।সোহম যেমনি হোক না কেন; সে তো সম্পর্কে সঞ্জয়ের বড় ভাই।এদিকে সঞ্জয় কথাটা শুনেই নয়নতারা কোল থেকে মন্দিরাকে তার কোলে নিয়ে কর্কশ কন্ঠে বলল।

ও আমার দারা হবে না বৌদিমণি.সঞ্জয়ের এমন কঠিন কথা শুনে নয়নতারা ব‍্যাকুল হয়ে বলল।অতটা নিষ্ঠুর হয় না ঠাকুরপো,দোহাই লাগে ওকে ছাড়িয়ে আনো।নয়তো আমি তোমার দোরে মাথা কুটে মরবো এই বলে দিলাম।

কিন্তু নয়নতারার করুণ আকুতি কানে তোলেনি সঞ্জয়।উল্টো শান্ত স্বরে বলল।তা মরনা মাথা কুটে,আমি বাঁধা দেবার কে কে শুনি! ঐরকম স্বামীর ঘর করার থেকে মরে যাওয়া ঢের ভালো। bou akhon magi

কথাটা বলেই সঞ্জয় মন্দিরাকে কোলে করে সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠতে লাগলো।এদিকে নয়নতারা কাঠ হয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলো।সে এখন বাড়ির ভেতরের উঠনে রান্নাঘরে পাশে দাঁড়িয়ে আছে।

রান্নাঘরে দোরের সরাসরি পঞ্চম দিকে দোতলার সিঁড়ি।আর সিঁড়ির পাশেই বারান্দায় একটা চাটাই পেতে নয়নতারার বাবাকে শুয়েই দেওয়া হয়েছে।তার বাবার মাথার পাশে নয়নতারার মা নিশ্চিন্ত মনে পান সাজতে বসেছে।

সঞ্জয়ের যে নয়নতারা প্রতি বিশেষ টান আছে;একথা নয়নতারা মা আগে থেকেই জানেন। তবে বাড়িতে ঢোকার মুখে সঞ্জয় যখন তার বৌদিমণির শাড়ির আঁচল খানি টেনে নিয়ে বাড়ি চাবির গোছাটা বেঁধে দিল।

তখন তার আর চিন্তা রইল না।এখন তিনি নিশ্চিন্ত হয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ কি নেবেন মনে মনে তার একটা হিসেব কষছেন।অন‍্য দিকে মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা নয়নতারা ছোট বোন হেমলতা।

সে আজকে বড্ড চিন্তিত।সে তার বড় দিদির চারমাসের বাচ্চাটি কে কোলে নিয়ে ঘন ঘন চমকে উঠছিল সঞ্জয়ের কথা বলার ভঙ্গি দেখে ও শুনে।অবশ্য তার ভয় পাবার ন‍্যায কারণ

আছে।যেখানে সঞ্জয় তার আপন মায়ের পেটের দাদাকে ক্ষমা করতে পারছে না; তার বৌদিমণিকে পথে নামানোর অপরাধে। সেইখানে হেমলতার মত পরের ঘরের মেয়েকে কেন ক্ষমা করবে সে!

তার যে এখনও স্পষ্ট মনে পরে।তখন দিদির সাথে দেখা করার অপরাধে বছর দুই তিন আগে সে ধরিয়ে দিয়েছিল সঞ্জয়কে তার জামাইবাবুর কাছে।কি মার না খেয়েছে ছেলেটা। কিন্তু একটি কথাও বলেনি।

শুধু ক্রুদ্ধ দুই নয়নে হেমলতার পানে তাকিয়ে চুপচাপ সহ‍্য করে গেছে।আজ এতদিন পরে সেই দৃষ্টি মনে পরতেই হেমলতার বুকটা কেমন করে উঠছে যেন।এমন সময় হঠাৎ কাঁধে হাতের স্পর্শে চমকে উঠলো হেমলতা।

কি রে এমন চমকে উঠলি কেন?হেমলতা দিদির প্রশ্নের জবাবে একটু মাথা দুলিয়ে নিরবে বুঝিয়ে দিল কিছু হয়নি।নয়নতারা তার বোনের কোল থেকে তার শিশু পুত্রটিকে কোলে নিয়ে বলল।

এটুকু এগিয়ে যা তো,দেবু খাবার নিয়ে এসেছে মনে হয়।খাবার এনে মা বাবাকে দিয়ে দোতলার থেকে মন্দিরাকে নিয়ে আয় যা।একথা শুনে হেমলতা ব‍্যস্ত হয়ে বলল।দিদি মন্দিরাকে তুমি নিয়ে এসো।

আমি এদিকটা দেখছি। দুই বোনের মতামত মিলখেলেও; কিছুক্ষণ পরেই দোতলার সিঁড়ি ভেঙে ওপড়ে উঠতে দেখা গেল হেমলতাকে।কিন্তু কেন!ঘটনাটি ঘটলো আচমকাই। bou akhon magi

সবাইকে খাবার দিয়ে যখন নয়নতারা উঠবে,ঠিক তখনি তার লক্ষ্মীছাড়া পূত্র সন্তান টি হাতপা ছুরে কাঁদতে বসলো।কান্ড দেখ হেমলতাও অবাক হল।দুধ দিতে দেরি হলেও কখনো তো বাবুকে কাদতে দেখেনি সে।

তবে আজ কি হল ওর! তবুও হেমলতা এই বলে সামলাতে চাইলেও যে।বাবুকে দুধ খাইয়ে পরে মন্দিরাকে নিয়ে এসো দিদি….। কিন্তু হেমলতার কথা শেষ হবার আগেই,হতভাগা দেবু বলল।

বৌদি দাদাবাবু তোমাদের খবর পেয়ে,খাবার ফেলে উঠে এসেছে।তার ওপরে গাড়িটা বসে গেল মাঝ পথে। তারপর তো দেখলেই কেমন দৌড়ে এসে..উফ্..আজকে সবাই যেন এক জোট হয়েছে হেমলতার বিপক্ষে।

ওপড়ে উঠে হেমলতা ধির পদক্ষেপে এগিয়ে চলল পুবদিকের একদম শেষের ঘরটির উদেশ‍্যে।তার হাতে খাবারের তালা ও জলের পাত্র।হৃদয়ে একরাশ ভয়।ঘরের সমুখে এসে মেঝের দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে কিছু বলতে চাইছিল হেমলতা।

তার সেই কষ্টটুকু লাঘব করে সঞ্জয় বলল।টেবিলে রেখে দাও,পরে খেয়ে নেব।একটু চমকে গিয়ে মুখতুলে তাকালো হেমলতা।চোখে চোখে পরতেই একটু কেঁপে উঠলো সে। কোন মতে এগিয়ে গিয়ে হাত থেকে খাবারের পাত্র নামিয়ে, bou akhon magi

মন্দিরাকে নিতে যেই পেছনে ঘুরেছে।সঞ্জয়কে দেখে আতকে উঠে পেছনে সরতে গিয়ে পরেই যাচ্ছিল সে। শেষ মুহুর্তে সঞ্জয় হাতে ধরে সামলে নিল তাকে।তারপর আচমকা এক

হেঁচকা টানে হেমলতার কোমল দেহটা আছড়ে পরলো সঞ্জয়ের বুকের ওপরে।

এমন বিপদজনক পতন ঠেকাতে হেমলতা তার দুহাত বুকে সামনে আনলো বটে।তবে গলা দিয়ে কোন আওয়াজ বের করতে পারলো না সে।ভয়ে তার হৃদপিণ্ড যে ঢাকের মতো বাজতে লাগল।

হেমলতা মনে হল তার আওয়াজ বুঝি সঞ্জয়ের কানের পর্দায় স্পষ্ট হয়ে ধাক্কা দিচ্ছে।তা না হলে ওমনি কেউ হাসে।এদিকে হেম লতার করুণ অবস্থা দেখে সঞ্চয় মৃদু হেসে বলল।এতদিন পালিয়ে ছিলে,

কিন্ত এবার ক্ষতিপূরণ সুদেআসলে বুঝে নেব আমি।এটুকু বলে হেমলতাকে ঠেলে দূরে সরিয়েদিল সঞ্জয়।কিন্তু ঐটুকু কথায় যথেষ্ট ছিল হেমলতার দূর্বল হৃদয়টাকে দুলিয়ে দিতে।

এই ছোট্ট ঘটনাটি তার মনের জমাট বাঁধা কুয়াশা সরিয়ে দিয়ে,এই কথাই যেন জানান দিতে চাইলো যে।পোড়ামুখি এবারের তোর কপাল পুড়লো বলে!নয়নতারা বাবুকে তার কোল থেকে মায়ের কাছে নামিয়ে দিয়ে,

নিচে বাড়ির চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখতে দেখতে এগিয়ে গেল রান্নাঘরে দিকে। বাড়িটা বেশ বানিয়েছে সঞ্জয়।দোতলা বাড়িটির চারপাশে প্রায়ই দুমানুষ উঁচু দেয়াল তোলা।ভেতরে উঠানটি বেশ বড়।

অনেক গুলো বড় বড় গাছ ও এটটা ফুলের বাগান আছে একটা।বাড়িটার ঢুকলেউ বসার ঘর।আর তার সোজাসুজি ভেতরে উঠনে আসার দরজা। দরজা দিয়ে বাইরে এলেই প্রশস্ত লম্বালম্বি টানা বারান্দা।

অনেকগুলো ঘর থাকলেও বাড়িটি তার নখদর্পণে!কারণ বাড়িটি করার আগে বৌদি ও ঠাকুরপো মিলে ছক কষে নির্ধারিত করেছে কোথায় কি হবে। নয়নতারা কথামত দোতলা

বাড়িটার ভেতরের উঠনে রান্নাঘর ও তার সোজাসুজি বাম পাশে ঠাকুর ঘরটি বানানো হলেও,আপাতত সে দুটোই তালাবদ্ধ।এদিকে সিঁড়িতে উঠতে হাতের বামে পরছে কলপার।কিন্তু তাতে আবার দেয়াল ওঠানো হয়নি।

বলাই বাহুল্য নয়নতারা মিথ্যা শান্তনা সঞ্জয় খুব একটা বিশ্বাস করেনি কখনোই। তাছাড়া নয়নতারা নিজেও তো কখনো ভাবেনি ঠাকরপোর সংসারের চাবির গোছা তার আঁচলটা বাঁধা পরবে।

ভাবতে ভাবতে একটা দৈর্ঘ‍্য শ্বাস ছেরে ডান হাতে শাড়ির আঁচলটা টেনে নিয়ে রান্নাঘরের দোর খুলতে লাগলো সে।বলা চলে নয়নতারা ভেবেই রেখেছে রান্নাঘরটি ফাঁকা দেখবে।কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে রান্নাঘরটি ভরা।

রান্নার জন্যে প্রয়োজনীয় যা কিছু আসবাবপত্র লাগে,মোটামুটি সবই আছে ঘরটিতে।ঠাকুর ঘরটিও তাই।এসব দেখে নয়নতারা ব‍্যস্ত হয়ে বাকি ঘরগুলোর তালা খুলে দেখতেই আবারও চোখে জল এলো তার।

কিছু সময় আগে,সঞ্জয় যখন তার শাড়ির আঁচলে চাবির গোছাটা বাঁধতে বাঁধতে বলছিল। এই বাড়ি তোমার বৌদিমণি।সবকিছুই তোমার ইচ্ছেমতো তৈরী।এবার ঘরের লক্ষ্মী তার নিজ দায়িত্ব নিজে হাতে তুলে নিলেই আমার মুক্তি।

তবে একটু আগেই যে নয়নতারা ভাব ছিল।তার মিথ্যে শান্তনা গুলো বিশ্বাস করেনি সঞ্জয়! কিন্তু তাহলে বাড়িটিকে নয়নতারা কথা মতো সাজিয়ে রেখেছে কেন।তবে কি তার মিথ‍্যে শান্তনা গুলিকে যত্ন করে সাজিয়ে রেখেছে সঞ্জয়!

হেমলতা ঘরে ঢুকেই অবাক হয়ে দেখল।তার দিদি বিছানায় বসে তার শাড়ির আঁচলটা চোখে বুলিয়ে নিচ্ছে। ব‍্যপারটা ঠিক ধরতে না পারলেও হেমলতা বিশেষ কিছুই বলল না দিদিকে।

এগিয়ে গিয়ে সে দিদির পাশে বসে ভাবতে লাগলো,নতুন বাড়িতে তাদের নতুন জীবনটি কোন মোড় না জানি নিতে চলেছে…সকালে জলখাবার সেরে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে গেল সঞ্জয়। bou akhon magi

আর তার পরেই আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো হেমলতা।বোঝাই যাচ্ছে গতকালের ঘটনাটি দাগ টেনেছে তার মনে।হেমলতা বারান্দায় পা দিয়েই দেখল,নয়নতারা বাবুকে কোলে

নিয়ে মনমরা হয়ে বসে আছে রান্নাঘরে দোরের সমুখে। অবশ্য করাণটি তার অজানা নয়। সকালবেলা জলখাবার শেষ যখন সঞ্জয় গঞ্জে যেতে উঠছে,ঠিক তখনি নয়নতারা সঞ্জয়ের ডান হাতটি চেপেধরে অনুনয়ের কন্ঠে বলল।

এবারে মতো ওকে মাফ কর সঞ্জয়।শুনিছি থানার বড় বাবু নাকি খুব মেরেছে ওকে।দোহাই লাগে তোমার দাদাকে ঘরে নিয়ে এসো।তা সে কথা ইনি কি কানে তুলবে কেন! সে নয়নতারার পানে তাকিয়ে বলল।

দেখ বৌদিমণি ও কাজ আমার দারা হবে না।তাছাড়া শুনেছি থানার বড় বাবু ঘুসখোর।সিন্দুকের চাবিটি তোমার কাছেই।মন চাইলে দেবুকে নিয়ে দাদাকে ছাড়িয়ে আনো গিয়ে।তবে মনে রেখো! এ বাড়িতে দাদা উঠলে,

আমার পা আর এবাড়ির ছায়া….সঞ্জয়ের কথাগুলো নয়নতারা হৃদয় কাঁপিয়ে দিয়েছিল।তাই তো সে সঞ্জয়ের হাতটি ছেরেদিয়ে মুখে চেপে ধরেছিল সে।তারপর আর কোন কথা বলার সাহস হয়নি নয়নতারার।

নয়নতারা মা অবশ্য বেশ কিছুক্ষণ মেয়েকে বোঝালো।তার স্বামী যা করেছে।তার উপযুক্ত শাস্তি না পেলে তার সাহস যে আরও বেরে যাবে।তা সে কথা নয়নতারাও জানে। তার

সাথে এটাও জানে যে,রাজেন্দ্র রায় কেমন লোক।তাদের পরিবারের সাথে থানার বড়বাবুর বিশেষ সম্পর্ক।এমন অবস্থায় তার স্বামীকে ওদের হাতে ছেড়ে নয়নতারার যে মন বসছে না কোন কিছুতেই।

এদিকে নয়নতারার মা মিনতী দেবী স্বামীকে খাইয়ে নিজে খেতে বসেছিলেন।এমন সময় হেমলতাকে দেখে তার কপালে ভাজ পরলো।মিনতী দেবী প্রথম দিকে সঞ্জয়কে দুচোখে দেখতে না পারলেও,

যখন সে উন্নতি পথে হাঁটা লাগালো তখন এনার নজর সঞ্জয়ের উপরে পরতে দেরি হয়নি মোটেও।তবে ছোট মেয়েটার ভাবসাব দেখে তিনি বড্ড হতাশ।ওবাড়িতে সঞ্জয় গেলেই হেমলতা আড়ালে লুকিয়ে পরলেও,

উনি ভেবেছিলেন এখানে তেমনটি করার সুযোগ নেই।তিনি মনে মনে ভাবছেন মেয়ের সাথে কথা বলে এই কথা কিভাবে বোঝানো যায় যে হেমলতাকে তিনি সঞ্জয়ের গলায় ঝুলাতে চাইছেন।

তবে হেমলতাকে না বুঝিয়ে নয়নতারাকে বোঝালে লাভ হয় বেশি।কিন্তু ওমেয়ে কিছু বোঝার অবস্থায় নেই।অবশ্য তিনি নিজেও সোহমের এমন কান্ডে ধাক্কা টা আচমকাই খেয়েছেন।

তবে ধাক্কা টা সামলেনিতে তার বেশ দেরি হয়নি। মিনতী দেবী হেমলতাকে ডেকে তার পাশে বসালেন।এমন সময় বাইরে থেকে দেবু ডাকে হেমলতাকে উঠতে হল।যখনে ভেতর বাড়িতে আসলো তখন তার সাথে আসলো অচেনা দুই নারী। bou akhon magi

তাদের পেছন পেছন দেবু আসলো মাথা এক বিশাল বোঝা নিয়ে।প্রাথমিক পরিচিত পরে জানা গেল,এই দুই রমণী মা ও মেয়ে।তারা থাকে দুই ঘরে পরেই।আজকে যাবার সময় সঞ্জয় তাদের বলে গেছিল এখানে আসতে।

উদেশ্য শাড়ি ও মেয়েদের প্রয়োজনীয় বাকি যা কিছু লাগে তাই দেখানো।এ গ্রামের সঞ্জয়ের সাথে সবারই মিষ্টি সম্পর্ক।অবশ্য সম্পর্কে মিষ্টাভাবটা না রেখে উপায় নেই।কারণ

কেউ বিপদে পরলে একমাত্র ভরশা সঞ্জয়।গ্রামে আর প্রভাবশালী লোক আছে বটে,তবে তাদের সাহায‍্য যে বড্ড মুল্যবান।আর সে মূল্য চুকাতে গ্রাম বাসিদের যে কি সমস্যার মধ্যে পরতে হয়,তা সবারই জানা।

দেবুর মাথা থেকে বোঝাটা নামিয়ে কার কি লাগবে সেই আলোচনায় বসলো।তবে নয়নতারার চিন্তিত মনে চিন্তা আরো বারলো।কেন! তা না হয় পরবর্তী পর্বে আলোচনা করা হবে। তবে তার আগে প্রশ্ন আসে…………………………………………………….গল্প কি চলবে?সারাটা দূপুর অসহ্য উত্তাপ ছড়িয়ে সবেমাত্র সূর্যটি মেঘের সাথে লুকোচুরি খেলতে বসেছে।তাই চারিদিকে এখন একটু প্রশান্তির ছায়া পরছিল মাঝে মধ্যে।আর সেই ছায়ায়

বারান্দায় বসে, আমাদের হেমলতা একটি চাটনির বয়ামে হাত ঢুকিয়ে পায়ে পা তুলে গুনগুন করছিল।তার পরনে আজ নতুন শাড়ি।শাড়ির রঙটি তার চোখে বেশ লেগেছে।তাই এখন শাড়িটা গায়ে জরিয়ে ফুরফুরে মনে চাটনির বয়ামে হানা দিয়েছে সে। bou akhon magi

তবে শুধু দুটো শাড়ি ও চাটনির এই বয়ামটিই হস্তগত করেছে হেমলতা।আর কিছু সে নেয় নি। তবে বলতে হয় হেমলতাকে বেগুনি রঙের শাড়িটিতে বেশ মানিয়েছে। ব্লাউজ বিহীন শাড়ি পড়াতে,

তার নগ্ন দুই বাহুতে মাঝে মাঝে সূর্যের মৃদু আলো পরে যে সঞ্জয়ের দুটি চোখে উজ্জ্বল হয়ে ফুটে উঠছে তাকি সে জানে! অবশ্য সে কথা তার জানার কথা নয়।সঞ্জয়ের এই সময়ে আসার কথা ছিল না।

যদিও নয়নতারা বলে দিয়েছিল এখন থেকে দুপুরের বাড়িতে আসতে।কিন্তু তার যে আজ পাশের গ্রামে একজনের সাথে দেখা করার কথাছিল।কিন্তু সেটি সম্ভব হয়নি বলে একটু জলদিই চলে এসেছে বাড়িতে।

তবুও তো আসতে আসতে সেই বিকেল হল। সেই যাই হোক,বাড়িতে ঢুকেই কেমন খালি খালি লাগছিলো।এখন হেমলতাকে দেখে দুষ্টু বুদ্ধিগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।এদিকে হেমলতার পুরো মনোসংযোগ একত্রিত হয়েছিল চাটনির বয়ামে।তা না হলে সেকি এমন বিপদে পরে!

কিছুক্ষণ তাকিয়ে দেখে সঞ্জয় একসময় পা টিপে টিপে হেমলতার পেছন গিয়ে দাঁড়ালো।এরপর ঝুকে পরে তার হাতটি পেছন থেকে এগিয়ে নিয়ে স্থাপন করলো হেমলতার দুই ডাগর চোখে।

বলাই বাহুল্য হেমলতা আঁতকে উঠে চাটনির বয়াম দিলো মাটিতে ফেলে।তবে কাঁচের বয়ামটি না ভেঙে গড়িয়ে দূরে সরে গেল কিছুটা সামনে। এদিকে হেমলতার গগনবিদারী চিৎকারে সঞ্জয়ের কানের পর্দায় তালা লাগার যোগার হয় আর কি। bou akhon magi

তাই হেমলতাকে ছেড়ে কানে আঙুল বোলাতে বোলাতে সে বলল।হতচ্ছাড়া মেয়ে এত জোরে কেউ চেঁচায়।কিন্তু ওপাশ থেকে কোন জবাব না আসায়,সঞ্জয় মুখ তুলে দেখে,বেচারী

হেমলতা ভীষণ আতঙ্কে সংকুচিত হয়ে বারান্দায় এক পিলারে পিঠ ঠেকিয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে।আর সেই নিশ্বাসের দমকেই কি তার সম্পূর্ণ দেহটি ঐভাবে কাঁপছে!চোখ দুটো বন্ধ তার।

তাই দেখে সঞ্চয় এগিয়ে গেল।সামনে দাঁড়িয়ে হেমলতার চিবুকে তার দুটো আঙুল ঠেকিয়ে কম্পিত সেই তরুণীর মুখমণ্ডল টি ঠেলে কিছু টা ওপরে তুলে নরম স্বরে ডাকলো থাকে,
হেম!

হেমলতা ডাকে সারা দিল।ধিরে ধিরে তাহার কাজল পড়া ডাগর চোখ দুটো মেলে ধরলো সে। সঞ্চয় আবার একি স্বরে বলল।এত ভয় পেলে চলে!তোমার চিৎকারে লোকজন ছুটে এলে কি হতো বলতো।

হেমলতার বলবার মত অনেক কিছুই ছিল। এমন ভাবে আচমকা পেছন থেকে চেপে ধরলে চেচামেচি করবে না তো কি করবে শুনি।খুব বললতে ইচ্ছে করছিল তার।কিন্তু তার মুখ ফুটে কোন কথা বেরোলো না।

সে যেন কোন এক সমোহনী শক্তির ধারা সমোহিত হয়েছে। কোন এক অজানা ঘোরে আছন্ন হয়ে সঞ্জয়ের চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে রইল সে।বৌদিমণি কোথায়?সঞ্জয় আবার প্রশ্ন করল।

তবে এই প্রশ্ন হেমলতার মনে সাথে মস্তিষ্কের এক ভীষণ দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করে দিল।যেখানে চেতনার যুক্তি বলছে”বলিসনে হেম বিপদে পড়বি” সেখানে তাহার মনটিকে সে এককথা বুঝিয়ে উঠতে পারলো না।

কি করে মানাবে বল!এমন ভয়ের মূহুর্তে সঞ্জয়ের শান্ত কোমল গলার আওয়াজ তার কানে কঠিন পুরুষালী আদেশ হিসেবে কানে বাজিতেছে যেন।আর সেই আদেশ শুনিবা মাত্র,যেন পেটের ভেতর হইতে কথাগুলো কেউ বাইরে ঠেলিতে শুরু করে দিয়েছে। bou akhon magi

অগত্যা হেমলতা তোতাপাখির ন‍্যায় সব বলতে লাগলো। দিদি আর মা তালতলা পেরিয়ে নদীর পারে মাঝি পাড়ায় গেছে।কেন গেছে সেখানে,কিছু বলেছে?তা জানিনে,শুধু বলেছে কি একটা কাজ আছে ওখানে।

হুমম…মাঝি পাড়া! কখন গেছে?বেশিখন হয়নি…মমমম…হেমলতা কথাটা শেষ হতেই সঞ্জয় তার চোয়ালখানা চেপে ধরলো।সঞ্জয়ের শক্ত হাতের চাপে হেমলতার কোমল ত্বকের জ্বালা ধরিয়ে দিল যেন।

গালের দুপাশে চাপ পরায় তার ঠোঁট দুটো কিছু টা ফুলে উঠেছিল। সঞ্চয় সেখানে আঙুল বুলিয়ে বলল।তা ফাঁকা বাড়িতে এমনই ভাবে সেজে বসে আছো কি আমার জন্যে!উম্হ্ম্ম…. মম.

হেমলতা গুমড়ে উঠলো এবার।দুহাতে সঞ্জয়ের হাতখানি চেপেধরে সরিয়ে দিতে চাইলো। কিন্তু তার গায়ে কি আর ওত বল আছে,যে ওমন পুরুষ মানুষের সাথে পেরে উঠবে। তার শত প্রচেষ্টা বিফল হতে লাগলো।

তবে সে ভাবতে বসলো কি করিয়া মুক্তি পাওয়া যায়।ভালোই হলো,বৌদিমণি আসতে দেরি হবে নিশ্চয়ই।সেই সুযোগে ক্ষতিপূরণের প্রথম কিস্তিটি বুঝে নেওয়া যাবে।এই বলে সঞ্জয় হেমলতার মুখটি থেকে যেই হাতখানি সরিয়েছে।

ওমনি হেমলতা “দিদি” বলে ডেকে উঠলো জোরে।সঞ্জয় চমকে গিয়ে পেছন ফিরে দেখলো পেছন ফিরলো।কিন্তু কোথায় নয়নতারা!কেউ নেই তো পেছনে!পরক্ষণেই নূপুরের ঝনঝনানি আওয়াজে হেমলতার পানে মুখ ফিরিয়ে দেখলো। bou akhon magi

হেমলতা এক ছুটে ঠাকুর ঘরে ঢুকে দোরে খিল আটকে দিয়েছে।সঞ্জয় হেমলতার কান্ড দেখে হাসতে হাসতে বলল। তা এভাবে কতদিন বাঁচবে শুনি।এদিকে ক্ষতিপূরণের সুদের পরিমান যে বারছে।

শেষমেশ পরিশোধ করতে না পারলে জোর পূর্বক দখল নিতে এলে তখন কি হবে শুনি।এদিকে হেমলতা সঞ্জয়ের কথায় কান না দিয়ে মনে মনে ঠাকুরকে বললতে লাগলো।
এবারের মত রক্ষে কর ঠাকুর,

আমি আর এবাড়িতে একা থাকবো না।সঞ্জয় বারান্দা থেকে নেমে আচারের বয়াম টি হাতে তুলে নিল।তারপর সেখানি বন্ধ দরজার সামনে রেখে দরজায় দুটো টোকা দিয়ে বলল।
বৌদিমণি এলে ডেকো,

আমি ওপড়ে যাচ্ছি….দেবু,নয়নতারা ও তার মা আরও কয়েকজন রমনীর সাথে তাল তলার পথটি ধরে বাড়ি ফিরছে। নয়নতারার মুখ হাসির রেখা ফুটেছে।সোহমকে ছাড়ানোর

ব‍্যবস্থা হয়েছে তাই।তবে পয়সা খরচ হবে বেশ কিছু।তা সে কথা নয়নতারার অজানা নয়। তার কাছে যে সোনার গয়নাগুলো আছে,সেগুলো বন্ধক রাখলেই হলো।পরে না হয়ে ছাড়িয়ে নেবে।

যদিও তার মা তাকে বোঝাছে সঞ্জয়ের সিন্দুক খুলে টাকা নিতে,দায়িত্ব তো তার হাতেই তুলে দিয়েছে সঞ্জয়।তাছাড়া সঞ্জয় তো বলেছে সিন্দুক খুলে যা লাগে নিয়ে নিতে।শুধু সোহম ওবাড়িতে না ঢুকলেই হলো।

কিন্তু নয়নতারা তা মানতে রাজি হবে কেন শুনি! সঞ্জয়ের টাকায় সে কেন হাত দেবে।তার ইচ্ছে হলে সে নিজে ছাড়িয়ে আনুক।নয়নতারা দুই ভাইয়ের মাঝে আসবে না।কিন্তু সে যখন না করেই দিয়েছে,তবে থাক।

আশ্রয় দিয়েছে এই ঢের….কি গো দিদি কি ভাবছো এত?ভাবনার মাঝে আচমকা পাশ থেকে কাঁধে কাঁধে লাগিয়ে ধাক্কা দিল একজন। নয়নতারা কিছু বলার আগেই অন‍্য একজন বলে উঠলো।

খুব কপাল করে ওমন দেবর জুটেছে,তার কথা না ভাবলে কি চলে। দেখছো না একদিনে কেমন চেহারা পাল্টে দিয়েছে।কথাটি শুনে আগের জন নয়নতারার শাড়ির আঁচলটি টেনে নিয়ে চাবির গোছাটা দেখিয়ে বলল।

তা আর বলতে। কি গো দিদি কিভাবে বশ ক‍রলে তোমার দেবরটিকে! আমাদের কেউও একটু বল শুনি…মায়ের সামনে এসব কথা শুনতে নয়নতারা গা জ্বলে গেল।সে একরকম ধমকের সুরে বলল।

তাকে বশ করতে হবে কেন শুনি।সবাই কি আর এক রকম হয় নাকি।তাছাড়া সঞ্জয় কেমন ছেলে সেকি তোমাদের অজানা।নয়নতারার মুখ ভার দেখে তার সুর পাল্টে বলল। রাগ করছো কেন!

আমার তো শুধু একটু ঠাট্টা করছিলাম। আচ্ছা বাদ দাও সে কথা।কাল সকালে একটু এসতো আমার বাড়িতে। কথা আছে!তারপর এটা ওটা নিয়ে কথা বলতে বলতে সবাই দলছাড়া হয়ে যে যার বাড়িতে চলেগেল।

এদিকে তালতলা থেকে সঞ্জয়ের বাড়িতে যেতে বামের মাটির রাস্তায় উঠলো নয়নতারা ও তার মা।এপথে ঘর খুব একটা নেই।রাস্তার দুপাশে ধানক্ষেত। সঞ্জয়ের বাড়িটি একদম মাটির রাস্তাটার শেষ সিমান্তে।

তার আগে দুটো টিনের বাড়ি ও একটা মাটির দেয়াল তোলা মুদির দোকান পরে। বাড়ি দুটোর আগে ক্ষেতের ওপর দিয়ে একটা পথ চলেছে একদম ক্ষেতের মাঝ বরাবর। আল তোলা রাস্তার শেষে ক্ষেতের মাঝে এক সাথে কিছু বাড়ি। bou akhon magi

অবশ্য বাড়ি না বলে বস্তি বললেও ভুল হবে না। আচ্ছা সে কথা তাক এখন। নয়নতারা এখন বাড়িতে পা রাখছে।আর তাকে দেখেই হেমলতা কোথা থেকে ছুটে এসে দিদিকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।

সে কান্না যেন আর থামবার নয়।সঞ্চয় পায়ে পা তুলে মাথার পেছনে দুহাত দিয়ে চুপচাপ শুয়েছিল বিছানায়। এমন সময় নয়নতারা হেমলতাকে নিয়ে সঞ্জয়ের ঘরে ঢুকে বলল।
সঞ্জয় এই কাজটি কিন্তু তুমি ভালো করনি মোটেও।

সঞ্জয় চোখ মেলে তাকিয়ে দুটি বোনকে এক সাথে দেখে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল।কোন কাজ বৌদিমণি?থাক এখন আর ন‍্যাকামো করতে হবে না। হেমের চাটনির বয়ামটা ভাঙলে কেন শুনি?

নয়নতারার কথায় সঞ্জয় অবাক হয়ে হেমলতার দিকে তাকালো।পরক্ষণেই ব‍্যপারটা বুঝে নিয়ে বলল।ও ঐ কথা,তা আমি আর জেনে বুঝে কিছু করিনি বৌদিমণি। তোমার বোনটি ওমন ভীতু যে কথা আমি কিভাবে জানবো বল।

সঞ্জয়ের কথায় হেমলতা তার দিদির পেছন থেকে একটু উঁকি দিয়ে দেখে নিল সঞ্জয়কে। আর মনে মনে নিজেকেই শাসন করতে লাগল আসল কথাটি দিদিকে বলতে না পারায়। এদিকে নয়নতারা বোনের অভিযোগ অনুসারে আসামিকে। bou akhon magi

বেশ কিছুক্ষণ শাসিয়ে যখন শান্ত হল।তখন অপরাধী তার মিথ্যে অপরাধের অনুতাপে জ্বলিতে জ্বলিতে অবশেষে তার প্রায়শ্চিত্ত করার প্রস্তাব রাখলো তার বৌদিমণির কাছে।
দেখ বৌদিমণি, ওত রাগ করলে চলে!

একটাই আচারের বয়ামই তো ভেঙেছি।সে না হয় কাল গঞ্জে থেকে আরো দশটা নিয়ে আসবো।তবে শর্ত আছে।আমার সাথে তোমার বোনটি কেউ যেতে হবে কিন্তু।কথাটি শুনিবা মাত্র হেমলতার পায়ের তলা থেকে যেন মাটি সরে গেল।

সেনিজেকে সামলাতে না পেরে নয়নতারার পায়ের কাছে “ধপ” করে বসে পড়লো।আজকে সন্ধ্যায় তালতলায় চায়ের আসরে আড্ডা জমজমাট।আজ শুধু মুরুব্বি নয়,সাথে জুটেছে কিছু নিষ্কর্মা ছেলে ছোকরার দল।

মুরুব্বিদের মধ্যে সবচেয়ে বয়োজ‍্যেষ্ঠ চরণ ঘোষ তার ওতি প্রিয় হুকোটা হাতে নিয়ে কথা বলতে বলতে মাঝেমধ্যে হুকোয় টান দিছেন।আর বাকি সবাই তার পানে হা হয়ে তাকিয়ে তাই শুনছিল।

ঠিক তখনই তালতলা দিয়ে সঞ্জয়ের মোটরসাইকেল টি যেই একটু সামনে এগিয়েছে,ওমনি চায়ের আসর ভেঙে দু তিন জন ছুটে এল। বলা চলে তারা একরকম সঞ্জয়ের গায়ের ওপরে এসেই পড়লো ।

আরে আরে করিস কি!সঞ্জয় কোন মতে তাদের পাশ কাটিয়ে মোটরসাইকেল টি দাড় করালো একটু সামনে এগিয়ে। অবশ্য ততখনে পাঁচ ছয়জন তাকে ঘিরে ধরেছে।তাদের মধ্যে থেকে কেউ বলে উঠলো।

সঞ্জয়দা খবর শুনেছো কিছু!?সঞ্চয় একবার সবার দিকে চোখ বুলিয়ে নিয়ে এগিয়ে গেল চায়ের দোকানের দিকে। কারণ সে জানে এরা ছুটে এলেও আসল খবর এদের থেকে পাওয়া বড় কষ্ট সাধ।

কারণ এরা আসল খবরের রসবোধ বারিয়ে দিয়ে যা বলবে তা শোনার ইচ্ছে সঞ্জয়ের নেই।চায়ের দোকানে সবার সাথে কূশল বিনিময় শেষে সঞ্জয় যা শুনলো।তা হল নদীর ওপারে রাজেন্দ্র রায় সঞ্জয়ের বৌদিমণির বাপের বাড়িটি ভাঙার বন্দোবস্ত করছে।

সেই সাথে তার কানে নয়নতারার মাঝি পাড়াতে নন্দলালের বাড়িতে যাওয়ার কথাও উঠলো।আর এতো কথার মাঝেও চরণ ঘোষ তাদের তালদিঘির পাশে মন্দিরটি যে সংস্কার করা দরকার সেকথা সঞ্জয়কে মনে করিয়ে দিতে ভুলল না মোটেও।

সব কথা শুনে সঞ্জয় বিদায় নিয়ে বেরিয়ে এলো চায়ের দোকান থেকে।তারপর তালদিঘির পথধরে মোটরসাইকেল টি ছোটালো মাঝি পাড়ার দিকে।সকাল সকাল স্নান করার অভ‍্যেস নয়নতারার।

তবে আজ একটু দেরি হয়েগেছে তার।গতকাল রাতে হঠাৎ করেই মন্দিরার জ্বর উঠলো।এমন হঠাৎ জ্বরে কোন কারণ খুঁজে পায়নি নয়নতারা। সে যাই হোক,তবুও সকালে উঠে আগে স্নান সেরে তবে রান্নাঘরে ঢুকবে সে।

তবে একটু চিন্তা হচ্ছিল সঞ্জয়কে নি। গতরাতে সঞ্জয় বলেছিল আজ একটু জলদি বেরোবে সে।তাই তারাতারি একটু রুটি তরকারি না করে দিলে ছেলেটা মুখে কিছু না দিয়েই বেরিয়ে পড়বে নিশ্চয়ই।

অবশ্য এতে সঞ্জয়ের কোন আপত্তি নেই।সে একা মানুষ এইসবে সে অভস্থ।কিন্তু নয়নতারা এবাড়িতে থাকতে সেটি হবে কেন শুনি!বলি এতদিন একাছিল এখন নয়নতারা যতদিন আছে ওমন ছন্নছাড়া জীবনযাপন কেন করবে সঞ্জয়। bou akhon magi

এইসব ভাবতে ভাবতে নয়নতারা স্নান সেরে নিল।তারপর গায়ে শুধু একটি লাল শাড়ি জরিয়ে নিয়ে, কলপাড়ের অস্থায়ী ভাবে দাঁড় কারানো নতুন বাঁশের বেড়ার সমূখের থাকা পর্দার আড়াল থেকে বেরিয়ে আসছিল সে।

ঠিক তখনি বেখেয়ালে পা হড়কে গিয়ে একটা কেলেঙ্কারি কান্ড হতেই যাচ্ছিল আর কি।তবে নয়নতারার ভাগ‍্য ভালো যে সঞ্জয় ছিল সিঁড়ির সমূখে।তাই তো শেষ মুহূর্তে সঞ্চয় ছুটে এসে সামলে নিল তাকে।

তবে নয়নতারাকে সামলাতে গিয়ে দেবুর আনাড়ি হাতে তৈরি নতুন বাঁশের বেড়ায় লেগে সঞ্জয়ের হাতখানি কেটেগেল বেশ কিছুটা। তবে সঞ্জয়ের কি আর সেদিকে খেয়াল আছে! সে ব‍্যস্ত হয়ে নয়নতারার সামনে বসে,

হড়কে যাওয়া পা টি হাতে তুলে দেখতে লাগলো।উফ্…সঞ্জয় একি করছো ছাড় বলছি কিছু হয়নি আমার…ছাড়বো মানে! দেখতে হবে তো কোথায় লাগলো কি না।অত দেখে কাজ নেই,বলছি তো লাগেনি।

সঞ্জয় সে কথায় কান না দিয়ে নয়নতারার পা টি পরক্ষ করতে লাগলো।এদিকে নয়নতারা এক পায়ে তার দেহে ভারসাম্য ধরে রাখতে না পেরে সঞ্জয়ের কাঁধে হাত রেখে ঝুঁকে গেল কিছুটা।অবশেষে সঞ্জয় যখন উঠলো।তখন নয়নতারার চোখ পড়লো তার হাতে।

হায় ভগ’বান একি ক‍রেছো তুমি!সঞ্জয়ের রক্তঝরা হাতদেখে নয়নতারা এক রকম আর্তনাদ করে উঠলো।আর সেটি শুনে ঠাকুরঘর হতে নয়নতারার মা ও পাশে নয়নতারার ঘরথেকে হেমলতা ছুটে বেরিয়ে এল।

এদিকে সঞ্জয় এক নজর তার বৌদিমণিকে দেখে তৎক্ষণাৎ মুখ ঘুরিয়ে নিল অন‍্যদিকে। তবে সেই এক নজরে সে যা দেখেছে তাতে তার মুখে তালা লেগে গেল।এদিকে নয়নতারা তার আঁচল খানা দিয়ে সঞ্জয়ের হাতটি চেপেধরেছে। bou akhon magi

সে কি ভাবে জানবে তার শাড়ির আঁচল টি বেখেয়ালে তার বুকের ওপড় থেকে সরে গিয়েছে অনেকটা।আর সেই সাথে তার মাতৃদুগ্ধে পরিপূর্ণ উন্নত স্তনের শোভা যে এক ঝলক সঞ্জয়ের চোখে লেগেগেছে।

তা নয়নতারা না বুঝলেও মিনতী দেবীর বুঝতে দেরি হয়নি। কিন্তু সে কি ভাবিয়া তার কন‍্যাটিকে সাবধান না করে হেমলতাকে বলল।তা ওভাবে দাঁড়িয়ে কী যাত্রাপালা নাটক দেখা হচ্ছে নাকিরে হেম।

দেখছিস ছেলেটা হাত কেটেছে,তারপরেও মুখ হা করে দাঁড়িয়ে আছে।মায়ের কাছে ধমক খেয়ে নয়।বরং দিদিকে যেন লজ্জায় পরতে না হয় সে কথা ভেবেই হেমলতা এগিয়ে গেল।

এবং দিদির আঁচল হতে সঞ্জয়ের হাতটি তার আঁচলে নিয়ে সঞ্জয়কে টানিয়া আনলোও বটে। তবে বারান্দায় উঠিবার সময় যখন তার ডাগর দুটো হরিণীর মত চোখের মিলন হল তার সমুখের থাকা শিকারীর চোখের সহিত।তখন হেমলতার অন্তর কাঁপিয়া উঠিলো। bou akhon magi

না কাঁপিয়া যাইবে কোথায়!সঞ্জয়ের নেশাচরের মতো চোখ দুটি যে এখন হেমলতার বুকে বন্দী হয়ে আছে। আর সেই কৌতূহলী চোখদুটো হেমলতার শাড়ি ও ব্লাউজের ঢাকা বুক

দুখানির সঠিক আকৃতি পরিমাপ করার চেষ্টায় ব‍্যস্ত হয়ে পরেছে।এবং সেই সাথে সঞ্জয়ের মনটি কেন যেন দুই বোনে বুকের মাপখানির হিসেবে মেলাতে বসে গেছে।সঞ্জয় তার অবাধ্য মনটি কিছুতেই বুঝিয়ে উঠতে পারছে না।

কিন্তু সে সময় নয়নতারার সঙ্গে ওমন ভালো মানুষের ভঙ্গ ধরে,এখন তার সাথে এমন নোংরামি হেমলতার কাটা ঘায়ে নুনের ছিটার মতো লাগিলো যে,তার কি হবে! তাই বলাই বাহুল্য রাগে হেমলতার শরীর জ্বলতে শুরু করেছে।

তবুও এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে চলবে কিভাবে।তাই সে গাল ফুলিয়ে বসার ঘরে ঢুকলো সঞ্জয়কে নিয়ে।সঞ্জয়ের হাতে হলুদ লাগানোর সময় হেমলতার মুখ ভার দেখে সঞ্জয় বলল।কি ব‍্যাপার!মহারানীর মুখ কালো কেন?

হেমলতা সঞ্জয়ের প্রশ্নের কোন জবাব না দিয়ে নিজের কাজ শেষ করে উঠে যাচ্ছিল।সে যাবার জন‍্যে পেছন ফিরতেই সঞ্জয় তার একটা হাতের কব্জি ধরে হেঁচকা টানে বুকি জরিয়ে নিলো।

আঃ..কি করছেন ছাড়ুন আমায়..তা হেমলতা মুখে বললেও আজকে তার পতন সামলাতে দুহাত বুকের সামনে আনিতে পারিলো না।কারণ তার দুহাত যে বন্ধ।এদিকে সঞ্জয়ের হাতের টানে হেমলতার হাতথেকে হলুদের বাটিখানা প্রায় পরেই গেছিল।

কিন্ত তার চেয়েও বড় কথা হল এই যে,সঞ্জয় হেমলতার এই অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তার হাতখানি হেমলতার কোমড়ে জড়িয়ে অন‍্য হাতে হেমের ফোলা ফোলা গালখানি টিপে দিয়েছে।

আর তাতেই আমাদের হেমলতার রাগটি হাওয়ার হয়ে গিয়ে তার জায়গায় দখল করেছে একরাশ লজ্জা।সেই সাথে তার বুকের খাঁচায় আবদ্ধ দুর্বল হৃদয় খানির ছটফটানি যে বেরে গেছে শতগুণ।

তা যদি এই পাষণ্ড বুঝিতো।তবে তাকে ওমন কঠিন বাহু বন্ধনে বাধিত না। কিন্তু সে কথা ভাবিয়া আর কি হবে,তাই বন্দী হেমলতা এবার উপায় না দেখে মৃদু স্বরে বলল।ছাড়ুন আমাকে মা দেখলে কেলেঙ্কারি কান্ড হবে যে।

তবে সঞ্জয় হেমের কথা শুনে তার বাহু বন্ধন আরো মজবুত করলো। তাতে হেমলতার নরম বুকখানি সঞ্জয়ের পেশিবহুল বুকে পিষ্ট হয়ে যেন মিশে যেতে চাইলো সঞ্জয়ের বুকের মাঝে।

তবে মাঝখানে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে হেমের কালো ব্লাউজ ও সবুজ শাড়িখানা।তবে যদি এসব না থাকি তো তবে! ইসস্.. এইসব কি ভাবিতেছে সে। নিজের মনের এমন অধঃপতন দেখিয়া এবার হেমলতা ভয়ে কাঁপিয়া উঠিলো।

সঞ্জয় তাকে কোন মন্ত্রবলে বশ করছে না তো! কথাটা মনে আসতেই সে ব‍্যস্ত হয়ে বলল।ছাড়ুন বলছি,নইলে চিৎকার করব এখনি!এবার সঞ্জয় হেমলতার কথায় হাসতে হাসেত বলল।

তাই বুঝি!সেটি তো হচ্ছে না হেম!খুব জ্বালিয়ে ছো আমায়।এবার সবকিছুর হিসেবে নেবার পালা। এই বলে সঞ্জয় যখন হেমলতার চিবুকে ধরে তার মুখখানি এগিয়ে আনিতে লাগলো।

বাস্, এটুকু দেখিয়া সঞ্জয়ের উদেশ্য বুঝিয়া লইতে হেমলতার দেরি হলো না। এতখন ধরে তার হৃদস্পন্দন সে সামাল দিয়েছে বটে।তবে আর পারিলো না।সঞ্জয়ের মুখখানি তার ঠোঁটে কাছে আসতেই সে হাত থেকে সব ফেলেদিয়ে “দিদি” বলিয়া চিৎকার দিয়ে উঠলো। bou akhon magi

তবে সঞ্জয় তাকে ছাড়লো না।নয়নতারা যতখনে বসার ঘরে আসলো।ততখনে সঞ্জয় হেমেলতার কোমল ঠোঁট দুখানিতে একটি চুমু বসিয়ে দিয়েছে।এদিকে নয়নতারা ঘরে ঢুকে সঞ্জয় ও হেমলতাকে এভাবে দেখে প্রশ্ন করলো কি হয়েছে।

আর ওমনি বৌদিমণিকে দেখেই সঞ্জয় ভালো মানুষের ভঙ্গিতে বলল।তোমরা দুটি বোন দেখি একই রকম।তোমার তো তাও পা হড়কে গিয়েছিল,কিন্তু তোমার বোনটি দেখছি তোমার থেকেও একপা এগিয়ে।

ঘরে এত কিছু থাকতে নিজের পায়ে পা বেঁধে পড়ের যাচ্ছিল।আমি কোন মতে সামলেছি।এই দেখ না সরা ঘরের কি অবস্থা করেছে।সঞ্জয়ের কথায় নয়নতারা মেঝের দিকে চোখ নামাতেই দেখলো।

মেঝেতে একদিকে পানির পাত্র ও অন‍্য দিকে হলুদের পাত্রটি উল্টে পরেছে।আর সেই সাথে সারা মেঝেতে হলুদের ছড়াছড়ি। তবে নয়নতারা কিছু বলিবার আগেই মিনতী দেবী এইসব দেখিয়া কপালে হাত ঠুকে বলল।

হায় আমার পোড়া কপাল,বলি তোর দাড়া কি কোন কাজই ঠিকমত হয় না রে হেম…তবে এতকিছুর মধ্যেও বেচারী হেম কিছুই বলিতে পারিলো না।বলি প্রথম পুরুষের ঠোঁটের স্পর্শ

তার ঠোঁটে লাগিতেই তার মনে যে ঝড় উঠেছে,তা যদি তার মা ও দিদি জানিত…।সে যাই হোক,তারা নাই বা জানিলো।

ছায়ামতি নদীর খেয়াঘাটে একটি বড় বটো বৃক্ষের ছায়ায় দাঁড়িয়ে,কিছুটা দূরে ঘাটের পানে তাকিয়ে আছে হেমলতা। সেই সাথে পুরুষ কন্ঠে গানের আওয়াজ ভেসে এসে লাগছে তার কানে..

আসবার কালে কি জাত ছিলে….এসে তুমি কি জাত নিলে…..কি জাত হবে যাবার কালে….সে কথা ভেবে বলো না….হেমলতার থেকে কিছুটা দূরে কয়েকজন লোক চিড়েগুড় হাতে বসে মাথা দুলিয়ে চলেছে গানের তালে।

তাদের মধ্যেই একজন বেসুরো গলায় গাইছিল গানটি। বেসুরো হলেও ভালোই শুনতে লাগছিল হেমলতার। এমন সময় সঞ্জয় এসে তার হাতখানা ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।
জাত গেল জাত গেল বলে

শেষবারের মত পেছন ফিরে একনজর দেখে নিল হেম।তবে কার জাত কিভাবে কোন বা কারণে গেল,তা সে কথা হেমলতার ভাবলে চলবে কেন! সে যার জাত সে দেখে বুঝে নিলেই হয়।

কিন্তু হেমলতার সরল মনখানি বুঝে উঠতে পারছে না সঞ্জয় তাকে নিয়ে এই কোন খেলায় মেতেছে। তবে এই সর্বনাশা খেলায় তার মুখখানি যে পুড়বে;সে কথা ভেবেই হেমের মনখানি আজ বড়ই উতলা হয়ে উঠেছে।

এতখন ধরে ডাকছি এদিকে মহারানী কানে তুল গুজে বসে আছে।বলি ঘাটের পানে তাকিয়ে নদীর ঐপারে পালানোর মতলব আটছো নাকি শুনি।সঞ্জয়ের কথা গুলো শুনে হেমেলতা দাঁড়িয়ে গেল।

আর গাল দুখানি কিঞ্চিৎ ফুলিয়ে বলল।বা’রে পালানোর মতলব কেন করবো শুনি! সব কিছু ঠিক হলে,নদীর পাশেই যেতে হবে যে। সঞ্জয় হেমের কাছে এগিয়ে এসে সস্নেহে তার ঘন কালো চুলে হাত বুলিয়ে বলল।

সেটি যে হচ্ছে না হেম।তোমাকে যেতে দিলে তবে তো যাবে।হেমলতা বেশ অবাক দৃষ্টিতে সঞ্জয়ের মুখটির পানে তাকিয়ে বলল। হু্ বললেই হলো!আমি থাকবো কেন এখানে শুনি?
সঞ্জয় হেমলতার কথায় হাসতে হাসতে বলল।

তা বললে হবে,তোমাকে যে আমি চরণদাসী বানানোর সংকল্প করেছি,তার কি হবে শুনি।এটুকুই কথা,আর কিছু না বলে সঞ্জয় হেমলতার হাতখানির আঙ্গুলের ফাঁকে তার আঙুল গুলোকে স্থাপন করে,

শক্ত বাঁধনে জরিয়ে নিলো হেমের হাতটিকে। এদিকে সঞ্জয়ের মুখের ওটুকু কথা হেমলতার মনের অন্দরে এক অজানা ঝড়ের আলোড়ন তুলে দিয়েছে যে,বলি সেই খবর কি সঞ্জয়ের কানে গেছে।

যাহার সমুখে দাঁড়াইলে হেমে বুকখানি কাঁপিয়া ওঠে।সেই পুরুষটির সাথে সে এক বাড়িতে,এক ঘরে একা থাকবে কি করে…সূর্যটা আজ কোন এক অজানা কারণে প্রচন্ড চটেছে তালদিঘির বাসিন্দাদের ওপরে।

তাই তো সেই সকাল থেকে তার রাগের ছটায় ঘরে থাকা অসম্ভব হয়ে পরেছে সবার। এই প্রচন্ড তাপদহ উপেক্ষা করে নয়নতারা তার পুত্র সন্তানটির মুখে তার বাঁ পাশের স্তনবৃন্তটি দিয়ে দূপুরে রান্না সারছে।

অবশ্য তার মা মিনতী দেবী বলেছিল বাবুকে দুধ খাইয়ে তবে রান্নায় বসুক।ততক্ষণ না হয় মিনতী দেবী উনুনের পাশে বসিবে। তবে নয়নতারা জানে সেটি ঠিক হবে না।একে তো

আজ সকালে তার মা একরকম জোর করেই তার ছোট বোনটিকে সঞ্জয়ের সাথে গঞ্জে পাঠালো।তার ওপরে মন্দিরা ও তা বাবা অসুস্থ।তা বাড়ির মানুষের এই অবস্থায় তার দুজনেই এক সঙ্গে রান্নাঘরে থাকলে চলবে কেন।

তবে তালদিঘির বাসিন্দাদের ওপরে সূর্যটি যতই রাগ ঝারুক না কেন।নয়নতারাকে রক্ষা করছে রান্নাঘরে পাশে বিশাল আঁকার একটি জামগাছ।এবার ওঠ তো দেখি মা নয়নতারা।ওদিকে মন্দিরা সেই কখন থেকে মা মা করছে।

একটি বারটি গিয়ে দেখে আয় তো ।নয়নতারা উঠতে উঠতে বলল।মা তখন তুমি হেমেকে ওভাবে জোর করলে কেন?তুমি তো জানোই হেম সঞ্জয়কে কেমন ভয়….নয়নতারাকে থামিয়ে তিনি বললেন।

হয়েছে বোনের জন্যে খবরদারি না করলেও চলবে।আমি যা করেছি তা ভেবে চিন্তেই করেছি।আর শোন ও ছেলেকে অনেকেই ভয় করে,তা বলে কি তার আসে না ওর কাছে।

নয়নতারা আর কিছুই বলল না।মন্দিরার মা ডাকটি তার কানে লাগছে।তাই সে তার ঘরের দিকে পা বারালো। মন্দিরার জ্বর নেমে গেছে,তবে শরীরটা বড্ড দুর্বল এখনো।এদিকে তার বাবার অসুখটা বারছে দিনে দিনে।

এই বিষয়টি নিয়ে সঞ্জয় গতকাল কথা বলেছে তার সাথে। সঞ্জয় চায় নয়নতারার বাবাকে শহরে নিয়ে যেতে,সেখানে বড় ডাক্তার দিয়ে তার বাবা চিকিৎসা করাবে।নয়নতারার লজ্জায় বলেনি কিছুই।

শুধু মেঝের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে গেছে। কি বলবে সে,কোন মুখেই বা বলবে।তার বাবা যে সঞ্জয়ের সাথে কখনও ভালো আচরণ করেনি। তবে তার জন্যে সঞ্জয়ের ওত চিন্তা কেন।নয়নতারা জানে সঞ্জয় ভালো ছেলে।

কিন্তু তবুও সঞ্জয় যে নয়নতারার মলিন মুখটিতে একটু হাসি ফোটানোর চেষ্টা করছে। সেটি নয়নতারা বেশ বুঝতে পারে। কিন্তু হায় রে অদৃষ্ট ছেলের এইটুকু চাওয়া সে পূরণ করতে পারলো না।

মা মাসি কোথায় গেছে?মন্দিরা প্রশ্নে ভাবনা থামিয়ে নয়নতারা তা কন্যার মাথার পাশে বসলো।এবং সস্নেহে মন্দিরার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল।হেম গঞ্জে গেছে তোর কাকুর সাথে।
কেন গেছে?

তোর মাসির চাটনির বয়ামে ভেঙেছে যে,হেম বলেনি তোকে?কথাটা শুনে মন্দিরা অবাক দৃষ্টিতে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল। তবে মাসি যে বলল চাটনির বয়াম একটি,তাই অল্প অল্প খেতে হবে সব একবারে যেন শেষ না করি।

তবে কি মাসি মিথ্যে বলেছে আমায়?নয়নতারা মন্দিরার কথা বুঝলো না।তবে ততখনে মন্দিরার পাশে বিছানায় চাটনির বয়ামটি চোখে পরলো তার। কিন্তু চাটনির বয়ামখানা তো ভাঙ্গে নি।তবে কি শুধু শুধু সঞ্জয়কে….ছিঃ ছিঃ…।

গতকাল বকুনি খেয়ে সঞ্জয় কেন হাসছিল বোঝেনি সে।এখন মনে পরতেই মুখখানি লাল হয়ে গেল তার।মনে মনে হেমলতাকে শাসাতে লাগলো,আজ বাড়ি ফিরলে হয় একবার। কিন্তু পরক্ষণেই মনে একটি প্রশ্ন দোল খেয়ে গেল।

তবে হেম কাঁদছিল কেন!…সামনে যতদূরে চোখ যায়,শুধু কয়েকটি নৌকা চোখে পড়ছে শুধু।তাও ভাটার টানে মাঝ নদীতে বয়ে চলেছে।চার-পাশের প্রকৃতি নির্জন,জনশূন্য।

আশেপাশের গাছগুলিও যেন সারি বেঁঁধে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আঁড়াল করতে চাইছে হেম ও সঞ্জয়কে। তারই মাঝে সবুজ ঘাসের গালিচায় সঞ্জয় শুয়ে আছে চিৎ হয়ে।পায়ে পা তুলে মাথাটি রেখেছে হেমলতার কোলে।গায়ে তার পাঞ্জাবী ও ধূতি। bou akhon magi

অন‍্যদিকে হেম বড্ড নিশ্চুপ।সে দুটো চাটনির বয়াম বুকে জরিয়ে আধবোঝা চোখে একবার সঞ্জয়কে দেখছে।তো একবার এদিক ওদিক তাকাছে।সে যে কিসের সন্ধান ক‍রছে,তা বোঝা যাচ্ছে না।

গায়ে তার সেই সকালের সবুজ শাড়িটি।আর তার আঁচল খানি এখন সঞ্জয়ের বাঁ হাতে পেছানো। বলতে গেলে হেম এখন সঞ্জয়ের হাতে বন্দিনী।তার মনটা পালাই পালাই করলেও, কোথাও যাওয়ার উপায় নেই তার।

নদীর এইদিকটার এই জমি সরকারি,ঝোপ জঙ্গল গাছ সবই সরকারের। তাই এদিকে ঘরবাড়ি নেই একদম।শুধু হালকা বনাঞ্চল আর পেছনে পাহাড়ের উপড়ে একটি আশ্রম।তাই তো হেমের এত ভয়।

আর তার সাথে মিশেছে রাগ।একি সাথে রাগ ও লজ্জায় তার মুখটি হয়েছে লাল।রাগটি তার মায়ের প্রতি।এমন বেহায়া ছেলেটার সাথে তাকে কেন পাঠালো।যে ছেলে সবার উপস্থিতিতে বাড়িতেই চুমু খেয়ে বসে আছে।

আর এই নির্জন প্রকৃতির মাঝে হেমলতা যে বড় একলা….সঞ্জয় চোখ খুলে হেমলতার দিকে তাকিয়ে দেখে।হেমের রক্তিম ঠোঁট দুখানি মৃদুভাবে নড়ে চলেছে একনাগাড়ে। না জানি কি সব বিড়বিড় করছে মনে মনে।

সঞ্চয় তার বাঁ হাতটি তুলে।তা আলতো ভাবে রাখলো হেমলতার গালে। সাথে সাথেই কেঁপে উঠলো হেমলতার সম্পূর্ণ শরীরটা।পরক্ষণেই মুখটা সরিয়ে নিতে চাইলো সে।তা বলি সঞ্জয় ছাড়বে কেন।

সে বুঝতে পেরে তার হাতটি নিয়ে গেল কোঁপার কাছে। খোঁপাটা টেনে নামিয়ে আনলো হেমলতার মুখখানি। “আহহ্” বলে মৃদু আওয়াজে চোখ মেলে তাকালো হেমলতা। মুখখানি কাঁদো কাঁদো করে বলল।

পায়ে পরি আপনার আমায় বাড়ি নিয়ে চলুন।হেমেলতার কাঁদো কাঁদো মুখটি দেখে সঞ্জয়ের মনে মায়ার সঞ্চার হলো না একটুও।উল্টো সে একগাল হেসে বলল।এতো কিছুর পরেও আবারও সেই পুরোনো ভুলটি করে,

এখন উনি বাড়ি যাবেন,অত সোজা নয়।বলি গতকাল বৌদিমণি কে দিয়ে বকুনি খাওয়ালে কেন শুনি।ঘাট হয়েছে আমার।আর কখনো ওমন করবোনা আমি…আআঃ..হেমলতা কথাটি শেষ করার আগে সঞ্জয় উঠে বসে

ডান হাতটি দিয়ে চেপে ধরলো হেমের চিবুক খানি।ভয় হেমলতা তার চোখ দুখানি বন্ধ করে নিলো আবারও।অন‍্যদিকে সঞ্জয় তার বৃদ্ধা আঙুল বুলিয়ে দিতে লাগলো হেমলতার রক্তিম ঠোঁট দুখানির নিচে কালো বিন্দুর মত ছোট্ট তিলটার ওপরে।

ঘাট হয়েছে বললেই হল।এখনো যে কিছুই হয়নি।এখনও অনেক শাস্তি পাওনা আছে তোমার।কিন্তু তার আগে বলতো তোমার সাথে বৌদিমণির গতরাতে কি কথা হয়েছে?হেমলতা ধিরে ধিরে তার ডাগর চোখ দুখানি খুলে তাকালো সঞ্জয়ের দিকে। bou akhon magi

দুরু দুরু বুকে মৃদু স্বরে বলল। সে পারবনা আমি, দিদি জানলে মেরেই ফেলবে আমায়..ওহহ্ সঞ্জয় হেমের মুখখানি টেনে নিয়ে এলো তার ঠোঁটের কাছে।দুজনের ঠোঁটের মাঝে অল্প

কিছু দূরত্ব এখন।কোন এক অজানা ভয়ে হেমলতার চোখ দুখানি বন্ধ।সঞ্জয় হেমলতার খোঁপা ছেড়ে দুই হাত রাখলো হেমের দুই গালে।আলতো ভাবে চুমু খেলো তার চোখের পাতায়।

তা বললে তো হবে না হেম।আজকের পর থেকে কিছু লুকানো চলবে না আমার থেকে। বলেছিল না ক্ষতিপূরণ পরিশোধ না হলে দখল নেব আমি।এটুকু বলে থামলো সঞ্জয়।হেমলতার দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করলো উত্তরের।

তবে উত্তর কিভাবে আসবে! সঞ্জয়ের হাতের স্পর্শে যে শিহরিত হচ্ছে হেমলতার সর্বাঙ্গ।তার রক্তিম ওষ্ঠ যুগল তখন কম্পায়মান।মায়াময় চোখদুটি তার তখনও নিজেদের রুদ্ধ রেখেছে।যেন পণ নিয়েছে তার না তাকানোর।

এদিকে হেমলতার লজ্জায় রাঙা মুখ খানি, সঞ্জয়ের মনের ভেতর নিয়ন্ত্রণের শক্ত দেয়ালটি ভঙ্গে দিয়েছে ইতিমধ্যে।তাই তো সঞ্জয় বেচারা বাধ‍্য হলো হেমে রক্তিম ঠোঁট দুখানি কামড়ে ধরতে।

আর সঞ্জয়ের এমন আচরণ বাধ‍্য করলো হেমলতার চোখ দুখানি মেলে দেখতে।এদিকে সঞ্জয় হেমলতার মাথাটা একহাতে শক্ত করে ধরে রেখেছে।আর সেই সাথে চলছে হেমেলতার ওষ্ঠ ও অধরে চোষন।

অপরদিকে হেমলতা অনুভব করছে সঞ্জয়ের অন‍্য হাতখানি বিপদজনক ভাবে তার কাঁধের আঁচল খানি নিয়ে নিচের দিকে নামতে শুরু করেছে। এবার হেম চাটনির বয়াম ছেড়ে চেপে ধরলো সঞ্জয়ের হাতখানি।তবে বাধ্য দিতে পারলো না।

কিভাবেই বা দেবে! তার দেহের সবটুকু শক্তি যে চুষে নিচ্ছে সঞ্জয়। হেমলতা করুন চোখদুটো তাকিয়ে আছে সঞ্জয়ের চোখের দিকে। তবে এবার যে সঞ্জয়ের চোখ দুখানি বন্ধ।

কারণ সে এখন হেমেলতার মনের ভেতর খালি পরে থাকা জমিনের দখল নিতে ব‍্যস্ত যে……আমিও ব‍্যস্ত,তবে প্রশ্নটি না করেলেই নয়।তাই বলছি,গল্পটি চলবে তো?দুদিন পরের কথা।

বিকেলে রান্নাঘরের পাশে জামগাছটির ছাঁয়ায় বসে তার পুত্র সন্তানটিকে গান গেয়ে শোনাছিল নয়নতারা।এমন সময় সঞ্জয় তার সামনে এসে দাঁড়ালো।নয়নতারা মুখখানি তুলে

দেখলো সঞ্জয়ের হাতে একটা সোনালী রঙের কাপড়ের থলে।এটা দেখেই তার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল।এ যে তার গয়নার থলে।এতে করেই নয়নতারা তার সোনা গয়না গুলো মহাজনের কাছে বন্দক রেখে এসেছিল।

সঞ্জয় তার হাত থেকে থলেটা নয়নতারা পায়ের কাছে ছুড়ে দিয়ে অভিমানী কন্ঠস্বরে বলল।এই ছিল তোমার মনে,এই কারণেই আমি যত্নকরে তোমার আঁচল খানায় সিন্দুকের চাবিখানা বেঁধে ছিমাল বুঝি!

আজ বুঝলাম আমার কথার কোন দাম নেই তোমার কাছে।তা থাকবেই বা কেন,কে হই আমি তোমার! দাদা এখানে এলে তাকে নিয়ে সংসার পাতো।আমার মুখ তোমাকে আর দেখতে হবে না।

কথাগুলো বলেই সঞ্জয় পেছন ঘুরে হনহনিয়ে যেতে শুরু করলো।সঞ্জয় দাঁড়াও,দোহাই লাগে তোমার…সঞ্জয় নয়নতারা ডাকে কান না দিয়ে উঠে গেল বারান্দায়।এদিকে নয়নতারা বাবুকে কোলে করে যতখনে উঠলো।

ততখনে সঞ্জয় বাড়ির দোরের সমুখে চলেগিয়েছে।নয়নতারা বুকখানি হটাৎ কেমন করে উঠলো।মনের ভেতর থেকে কেউ একজন বলে উঠলো।পোড়ামুখি বাপ মা মরা ছেলেটাকে ঘর ছাড়া করে কি সুখ পেলি তুই।

তার মনটি একথা বললেও, তার বোনটি এবারের মতো রক্ষা করলো তাকে।নয়নতারা দোরের সমুখে এসে দেখলো। তার অতি লাজ্জুক বোনটি লাজ লজ্জা ভুলে সঞ্জয়কে জয়িরে ধরেছে।

অবশ্য উপায় ছিল না হেমলতার।দোরের সমুখে রুখে দাঁড়িয়েও যখন সঞ্জয়কে আটকানো যাচ্ছিল না।তখন পেছন থেকে দুহাতে তাকে জরিয়ে কান্না জুরে দিয়েছে সে।সঞ্জয় হেমলতার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে কিছু বলতে চাইছিল। bou akhon magi

এমন সময় নয়নতারা এসে বাইরে যাওয়ার দোরখানি আগলে দাড়ালো। এবং ধরা গলায় বলতে লাগল।কোথাও যাওয়া হচ্ছে না তোমার,তোমার ঘরদোর ছেড়ে কোথায় যাবে তুমি শুনি।

সঞ্জয় কোন কথা না বলে চুপ করে রইল। ঠিক আছে, কথা বলবেনা তো।তবে যাওয়ার আগে বলে যেও আমি কি তোমাদের দুই ভাইয়ের জ্বালায় গলায় দড়ি দেব, না মাথা কুটে মরবো।

কথাটুকু শুনে সঞ্জয় নয়নতারার সামনে হাঁটু মুড়ে দুহাতে তার বৌদিমণির কোমড়খানি জড়িয়ে ধরে ব্যস্ত হয়ে বলল।ছি.. ছি.. অমন কথা মুখে আনবে না বৌদিমণি।আমার জন্যে কেন মরবে তুমি।এমন দিন এলে তোমার আগে যেন আমি মরি।

তুমি ছাড়া আমার আর কে আছে বলো।আমি কখনো কারো কাছে ভালবাসা পায়নি,তুমি শুধু একটু ভালবাসা দিও,ওটুকুই আমার সম্বল। আর আমার যা কিছু আছে সব তোমার পায়ে অর্পণ করবো আমি।

নয়নতারা চোখের কোণে অশ্রু জমে। মনে মনে ভাবে সত্যিই তো কি আছে ওর।ছেলেটা যে সব থেকেও কিছুই নেই। একটা মানুষ আপনজন ছাড়া যে বড্ড অসহায়।নয়নতারা তার অশ্রু মুছে হাত রাখে সঞ্জয়ের মাথায়।

সঞ্জয়ের ঘন চুলে আঙ্গুল চালাতে চালাতে সে বলে।আমি তোমাকে না জানিয়ে কিছু করতে চাইনি।কিন্তু ঐদিন তুমি না বলে দেওয়ায়,আমার আর কোন উপায় ছিল না।তোমার ভাইকে তুমি এই বাড়িতে থাকতে দেবে কি দেবে না,সে তুমি বুঝবে। bou akhon magi

কিন্তু আমি তাকে ওই বাজে লোকগুলোর হাতে ছেড়ে শান্তিতে থাকতে পারবো না।তাদের কথার মাঝে নয়নতারা মা কখন যে হেমলতার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে তার কেউ খেয়াল করেনি সেটি।সব শুনে তিনি বলে উঠলেন।

এইসব কি বলছো বাবা তুমি। তোমার কেউ নেই এই কথা বলতে পারলে তুমি,বলি আমরা কি তোমার আপন কেউ নোই! হঠাৎ এমন কথায় সবাই চমকে উঠলো।সবচেয়ে বেশি চমকালো হেমলতা।

সে অবাক হয়ে চোখ বড় করে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে রইলো।হঠাৎ করে সঞ্জয়ের প্রতি তার মায়ের এমন দরদ ঠিক হজম হচ্ছিল না তার। যে যাঈ হোক,এদিকে সঞ্জয় উঠে

দাঁড়িয়ে বলল।হবে না কেন,আপনি তো আমার মায়ের মত।সেই ছোট বেলায় মাকে হারিয়েছি,এখন আপনি এই বাড়িতে পা দেয়ার কারণে আমার শূন্য বাড়িতে মায়ের ছোঁয়া লেগেছে আবার।

কথাটুকু শুনে মুখে একটুখানি হাসি টেনে মিনতী দেবী বললেন।ও তোমার মুখের কথা বাপু,কয়েকটি দিন যাক তারপর দেখবে আমাদের কে মনে হবে বোঝা।কাঁধে থেকে ঝেড়ে ফেলতে চাইবে তখন।

এবার নয়নতারা ব‍্যস্ত হয়ে বলল।আহা মা,তুমি ওভাবে বলছো কেন? ওকি কখনও বলেছে সে কথা।পাশে থেকে সঞ্জয়ও বলে উঠলো।মায়ের সংসার থেকে মাকে তারিয়ে দেওয়ার সাহস আমার নেই।এ যে আপনারি সংসার।

এবারে মিনতী দেবীর মুখের হাসিখানি আর একটু প্রসারিত হলো। সে তাদের কাছে এগিয়ে এসে নয়নতারা কোল থেকে বাবুকে তার কোলে নিয়ে বলল।তাই যদি হয় বাবা, তবে আগেই বলে রাখছি।

তোমার একটা ব‍্যবস্থা না করে আমি এখান থেকে নড়ছি না।কথাটা বলে তিনি আড় চোখে একবার সঞ্জয়ের মুখের দিকে দেখে নিলেন।তারপর আরও বললেন,তা তোমার দাদাকে ছাড়িয়ে আনলে এ বাড়িতে ঢুকিও না যেন।

যেমন কর্ম করেছে তেমন শাস্তি ভোগ করুক আগে।এখন গাছতলায় রাত কাটাক কিছুদিন,তবে যদি শিক্ষা হয় ওর।তাদের কথার মাঝে মন্দিরা এলো ছুটে।বসার ঘরে ঢুকেই সে তার মাসির হাত ধরে টানতে লাগলো।

আর বলতে লাগলো।আমার সাথে একটু এসো মাসি,জলদি এসো। যেন মাসির সাথে বিশেষ কোন কাজ আছে তার।তবে সঞ্জয় একবার ডাকতে চাইছিল হেমলতাকে।কিন্তু তখুনি দেবু এসে বলল।এখনি যেতে হবে তাদের।

তাই আর। ডাকা হল না।কিন্তু বেরিয়ে যাওয়ার আগে একটা কাগজে কিছু লিখে দেবুর হাতে দিয়ে বলল।ফিরে এসে এই কাগজখানি হেমেলতার হাতে দিবি।অন‍্য কারো হাতে যেন না পরে বুঝেছিস।

দেবু কাগজটা নিয়ে ঘাড় কাত কর বলল। ঠিক আছে দাদা বাবু….সঞ্জয়ের চিঠিটা হাতে পেয়ে হেমলতা হৃদস্পন্দন বেরে গেল।খুলবে খুলবে করেও চিঠিটা খোলা হয়নি আর।গত দুদিন ধরে হেম লুকোচুরি খেলছে সঞ্জয়ের সাথে।

ঐদিনের ঘটনার পর থেকে এই দুদিন সঞ্জয় আর হাত বাড়ায়নি তার দিকে।তবে হেমলতার প্রশ্ন কেন বাড়ায়নি!সে কি ভয় পেয়েছে! কিন্তু ভয় পাওয়ার লোক তো সে নয়।তাছাড়া ওমন দানবের মতো দেহ থাকতে ভয় পাবেই বা কেন। bou akhon magi

তবে হেমলতার কাছে কেন আসছে না সঞ্জয়! কেন কাছে টেনে নিচ্ছে না তাকে। তার মনে একি অদ্ভুত আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে এখন কেন দূরে দূরে সরে যাচ্ছে সঞ্জয়। এই

ভাবনাগুলো গত দুদিন ধরে হেমলতার দেহ ও মনটাকে পুড়িয়ে চলেছে অবিরত ভাবে। সে না পারছে তার সমস্ত লাজ লজ্জা ভেঙে সঞ্জয়ের কাছে ছুটে যেতে আর না পারছে এই জ্বালা সইতে।

যতবার সব ভুলতে চাইছে,ততবার ঐদিনের প্রতিটি মূহুর্ত মনে পরে যাচ্ছে তার,সঞ্জয়ের প্রতিটি স্পর্শ যেন অনুভব হচ্ছে তার সারা শরীরে।থেকে থেকে শিহরিত হচ্ছে তার সারা দেহ। যার থেকে এতদিন সে লুকিয়ে থাকতে চেয়েছে।

এখন তাকে একটি বার না দেখলে মনটা কেমন কেমন করে উঠছে তার।যেন তার বুকের একটি বড় অংশ সঞ্জয় ছিনিয়ে নিয়েছে তার কাছে থেকে। কিন্তু এখন কেন এতো দূরে সে!

এইসব ভেবে হেমলতার অভিমানী মনটাও পণ নিয়েছিল।সেও যাবে না তার কাছে। কিন্ত হায় পোড়া কপাল সে আর হলো কোথায়। আজ বিকেলে লুকিয়ে লুকিয়ে তার দিদি ও সঞ্জয়ের সব কথা শুনছিল সে।

সঞ্জয় বাড়ি ছেড়ে যাবে শুনে নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি হেম। তাইতো সব লাজলজ্জা ভুলে জড়িয়ে ধরেছিল সঞ্জয়কে। চোখের জল ঝড়িয়ে উল্টোপাল্টা কি সব বলে গেছে।এখন ভাবতেই ভীষণ লজ্জায় তার মুখখানি রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে।

কিন্তু বিকেলে ওমন কান্ড করে,এখন একটা সামান্য কাগজের টুকরো খুলে দেখতে এত ভয় কেন হচ্ছে তার। এই প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে আমাদের হেমলতা এখন বালিসে মুখ গুজে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে।

আর এদিকে যে নয়নতারা ঘরে ঢুকে সঞ্জয়ের চিঠিখানা হাতে তুলে নিয়েছে সেদিকে তার কি খেয়াল আছে!হেম কার চিঠি’রে এটা? কথাটা শুনেই হেমলতা এক রকম লাফিয়ে উঠে পেছন ফিরে তাকালো।

আর পেছন ঘুরে দিদির হাতে চিঠিটা দেখেই তার বুকটা কেঁপে উঠলো আর সেই সাথে গলা শুকিয়ে হলো কাঠ।হেমলতা জলদি এগিয়ে গিয়ে তার দিদির হাত থেকে চিঠিটা নিতে চাইলো।কিন্ত পারলো না,

হেমের কান্ড দেখে নয়নতারা তার হাত সড়িয়ে নিয়েছে।নয়নতারার উচ্চতা পাঁচ ফুট দুই বা তিন হলেও।তার বোনটি হয়েছে খাটো।নয়নতারার কাঁধের কাছে তার মথাটির অবস্থান।তাই বলাই বাহুল্য শত চেষ্টার পরেও হেমলতা চিঠির নাগাল পেল না।

অবশেষে কাঁদো কাঁদো মুখে হেম বলল।দোহাই লাগে দিদি ওটা দাও আমায়।তবে হেমের কাঁদো কাঁদো মুখখানি নয়নতারার মনটিকে গলাতে সক্ষম হল না।সে চিঠিটা হাতে বিপদজনক ভাবে রেখে প্রশ্ন করল।

দেব, তবে তার আগে জানতে হবে কোন চুলোয় মুখ পোড়ানো হচ্ছে।কথাটা শেষ করে নয়নতারা যখনই চিঠিটা খুলতে যাবে।ঠিক তখনি হেমলতা তার দিদির হাত থেকে চিঠি খানা ছিনিয়ে নিয়ে মুখে পুরে দিল।

পোড়ামুখি একি করলি তুই! এখনি বের কর চিঠিটা,বের কর বলছি।তা নয়নতারা কথা হেম কি আর শুনবে! সে দুই হাতে মুখ চেপে মাথা দুলিয়ে না করে দিল। তবে নয়নতারাও ছাড়ার পাত্রী নয়।সে রাগি গলায় বলল।

এখানে এসে এইসব হচ্ছে!এখনো সময় আছে হেম চিঠিখানা বের কর বলছি। নয়তো মাকে গিয়ে সব বলবো এখুনি।নয়নতারা কথায় হেম ভয় পেল বটে তবে মুখ খুলল না। তাই নয়নতারাকেই হাত লাগাতে হলো।

কিন্ত হেমের মুখ খুলে নয়নতারা অবাক। কোথায় চিঠি! এবার নয়নতারা অবাক হয়ে তার বোনটির মুখের পানে তাকিয়ে রইলো।আর মনে মনে ভাবতে লাগলো।কি হয়েছে তার বোনটি,এমন অদ্ভুত আচরণ করছে কেন হেম।

কই আগে তো হেম তার থেকে কিছুই লুকিয়ে রাখতো না।তবে নয়নতারার ভাবনার থেকেও বড় ভাবনা এখন হেমলতার মনে।তার যে চিঠিখানা পড়াই হল না।ইসস্..কি না জানি লিখেছিল চিঠিতে।

নিজের ওপরে খুব রাগ হচ্ছে এখন। চিঠিটা হাতে পেয়ে কেন পড়লো না সে,এখন কি করবে হেম….বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই সঞ্জয়ের নৌকাকি ঘাটে এসে থামলো। আজ রাজেন্দ্র রায়ের সাথে দেখা করেছে সে।

কিন্তু লাভ হয়নি কোন। রাজেন্দ্র রায় জেদ ধরে বসে আছে ঐ বাড়ির দখল সে ছাড়বে না।সঞ্জয় তাকে বলেছিল টাকা না হয় তাকে আর বারিয়ে দেওয়া হবে।কিন্তু তবুও রাজেন্দ্র রায় দখল ছাড়তে রাজি নয়।

তার এক কথা,গ্রামের সবার সামনে তার গায়ে হাত তোলার প্রতিশোধ সে নিয়ে ছাড়বে। তার এমন কথায় অন‍্য সবাই ভয় করলেও সঞ্জয় ভয় পায় না তাকে।তবে জমি জমা হল সরকারি কাগজ পত্রের বিষয়।

এখানে গায়ের জোর দেখিয়ে লাভের কিছুই হবে না। যা করতে হবে বুঝে শুনে করতে হবে।এইসব ভাবতে ভাবতে নন্দলাল কে বিদায় জানিয়ে সঞ্জয় রওনা দিলো তার বাড়ির দিকে। তাকে জলদি ফিরতে হবে বাড়িতে।

কারণ আজ আকাশের মুখখানি ভার….কালো মেঘ যেন জলে টইটুম্বুর,একটা খোঁচা মারলেই ভাসিয়ে দেবে সব।মাঝে মাঝে ঠান্ডা দমকা হাওয়া বইছে আর মৃদু মৃদু বিদ্যুতের ঝলকানি।

সঞ্জয় তালতলার পথে ঢোকার আগেই ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। সঞ্জয় যখন বাড়ি পৌঁছল,তখনে সে বৃষ্টিতে কাক ভেজা হয়ে গেছে।সেই সাথে গায়ে লেগেছে কাঁদা মাটির ছিটে। bou akhon magi

তাই এই বৃষ্টিতে ভিজেই স্নান সারল সে। আর সেই সময় নয়নতারা দাড়িয়ে রইলো বারান্দায়। কিছুক্ষণ পর সঞ্জয় যখন কলপাড়ের বাঁশের বেড়ার আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো। তখন তার কোমরে শুধু একটা লুঙ্গি জরানো।

এবং সেটা ভেজা বলে তার গায়ে লেপটে আছে। নয়নতারা একবার এই দৃশ্য দেখেই চোখ নামিয়ে নিল।তাবে তার মুখখানির রঙ পাল্টে গেছে ইতিমধ্যে।এদিকে দরজার আড়ালে

দাঁড়িয়ে থাকা হেমলতা কিন্তু চোখ নিমিয়ে নিল না। নামাবেই বা কেন শুনি, সঞ্জয় জদি তার বুকে হাত দিতে পারে,তবে সে কে দেখতে পারবে না।তাছাড়া তার চোখ দুখানি সঞ্জয়ের দেহ থেকে সে সরিয়ে নিতে পারছে না।

সঞ্জয়ের দেহটি দেখে তার ঐদিন কার কথা মনে পরে যাচ্ছে।ঐদিন নদীর পাড়ে ঘাসের ওপরে ফেলে এই বিশাল দেহটি তার কোমল শরীরটাকে পিষ্ট করেছে। কথাটা ভাবতেই হেমলতার সারা শরীরে কাটা দিয়ে উঠলো।

আর তখনই তার চোখ পড়লো সঞ্জয়ের চোখে।তৎক্ষণাৎ দরজার আড়ালে লুকিয়ে পরলো হেমলতা।হৃদস্পন্দন বেড়ে গেল তার।সেখানে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না সে।ছুটে চলেগেল তার মায়ের ঘরের দিকে।

রাতের খাবার খেয়ে সঞ্জয় বেশ কিছুক্ষণ খাতা কলম নিয়ে সময় কাটালো।তবে আজকে তার মন বসছে না আর হিসেবের খাতায়।বার বার চোখটি চলে যাচ্ছে ঘড়ির দিকে।মনের

ভেতরে প্রশ্ন জাগচ্ছে হেম কি আসবে!সারা দেবে তার ডাকে।আচ্ছা দেবু হেমকে চিঠিটা দিতে ভুলে যায়নি তো আবার!….এই রকম নানান প্রশ্ন ঘুরেফিরে বেরাছে তার মনে

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *